এই ২৪ শে আগস্ট ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার যা পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবধি পর্যন্ত খুবই স্মরণীয় হয়ে আছে।

পৃথিবীর জন্ম লগ্ন থেকে পর্যন্ত ২৪ শে আগস্ট এই দিনটাকে কেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তার বিশেষ কিছু গুরুত্ব শেয়ার করব আপনাদের কাছে, ২৪ শে আগস্ট ঘুরতে যাওয়া পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবধি পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত শেয়ার করব যা আপনার জেনে রাখা অত্যাবশ্যকীয়।

১৬০৮ – প্রথম সরকারিভাবে ইংরেজ প্রতিনিধি ভারতের সুরাতে আসেন

১৬০৮ সালে, ইংরেজ বণিকেরা প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে ভারতের সুরাতে পৌঁছান। এই ঘটনাটি ইংরেজদের জন্য একটি মাইলফলক ছিল, যা পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের উপনিবেশ স্থাপনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এই প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত করে এবং ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শুরুর দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখে।

১৬৯০ – ইংরেজ ব্যবসায়ী জব চার্নক সদলে সুতানুটিতে ইংল্যান্ডের জাতীয় পতাকা ওড়ান

১৬৯০ সালের এই দিনে, জব চার্নক কলকাতার সুতানুটি গ্রামে ইংল্যান্ডের জাতীয় পতাকা ওড়ান। এই ঘটনাটি কলকাতা নগরীর প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে ধরা হয়। কলকাতা পরবর্তীতে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। এটি শহরটির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা কলকাতার সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশের সূচনা করে।

১৮১৪ – ব্রিটিশ সেনাদল ওয়াশিংটন ডিসি অধিকার করে এবং হোয়াইট হাউস জ্বালিয়ে দেয়

১৮১৪ সালের এই দিনে, ব্রিটিশ সেনাদল ওয়াশিংটন ডিসি আক্রমণ করে এবং হোয়াইট হাউস জ্বালিয়ে দেয়। এই ঘটনা ছিল আমেরিকা ও ব্রিটেনের মধ্যে সংঘটিত ১৮১২ সালের যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্রিটিশ আক্রমণের ফলে আমেরিকার রাজধানী শহরে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে এবং এটি মার্কিন ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৮১৫ – নেদারল্যান্ডসের আধুনিক সংবিধান এই দিনে গৃহীত হয়

১৮১৫ সালের ২৪ আগস্ট, নেদারল্যান্ডসের আধুনিক সংবিধান গৃহীত হয়, যা দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সংবিধানটি নেদারল্যান্ডসকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত করে এবং আধুনিক নেদারল্যান্ডস রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে। এটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে নতুন দিশা প্রদান করে।

১৮২১ – মেক্সিকো স্পেনের উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে

১৮২১ সালের এই দিনে, মেক্সিকো স্পেনের উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর, মেক্সিকো অবশেষে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এটি ল্যাটিন আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি প্রধান অধ্যায় হয়ে ওঠে। এই স্বাধীনতা দিবসটি মেক্সিকোর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে পালিত হয়।

১৮৭৫ – ক্যাপ্টেন ম্যাথুওয়েব প্রথম ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন সাঁতার কেটে

১৮৭৫ সালে, ক্যাপ্টেন ম্যাথুওয়েব প্রথমবারের মতো সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। এই কীর্তিটি তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দেয় এবং সাঁতারুদের মধ্যে একটি নতুন প্রেরণা সৃষ্টি করে। ম্যাথুওয়েবের এই অর্জন তাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় এবং সাঁতারের ইতিহাসে তার নাম স্থায়ীভাবে খোদাই করে।

১৯০২ – জোয়ান অব আর্কের মূর্তি উন্মোচন করা হয় সেইন্ট পিয়েরে-লে-তে

১৯০২ সালে, জোয়ান অব আর্কের মূর্তি উন্মোচন করা হয় ফ্রান্সের সেইন্ট পিয়েরে-লে-তে। জোয়ান অব আর্ক ফ্রান্সের জাতীয় বীর ছিলেন, যিনি ফরাসি বিপ্লবের সময় ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। এই মূর্তিটি তার সাহসিকতা এবং দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ফরাসি জনগণের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।

১৯১৩ – ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পরস্পরকে আক্রমণ না করার

১৯১৩ সালে, ফ্রান্স এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা পরস্পরকে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই চুক্তিটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এটি ইউরোপের দুই প্রধান শক্তির মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করতে সহায়ক হয়েছিল।

১৯১৪ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনী নামুর দখল করে

১৯১৪ সালের এই দিনে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান বাহিনী বেলজিয়ামের নামুর শহর দখল করে। এই দখলদারিত্ব যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় শক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় ছিল। এটি তাদের পশ্চিম ফ্রন্টে অগ্রসর হওয়ার পথে সহায়ক হয় এবং যুদ্ধের গতিপথকে প্রভাবিত করে।

১৯২৯ – বায়তুল মোকাদ্দাসে নুদবা প্রাচীর আন্দোলন শুরু হয়

১৯২৯ সালে, বায়তুল মোকাদ্দাসে নুদবা প্রাচীর আন্দোলন শুরু হয়, যা ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত করে। এই আন্দোলন পবিত্র স্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের প্রতিফলন ছিল এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনার একটি মাইলফলক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৯৪৪ – জার্মান সাম্রাজ্য থেকে প্যারিস মুক্ত

১৯৪৪ সালের ২৪ আগস্ট, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস জার্মান দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হয়। মিত্র বাহিনীর এই বিজয় প্যারিসের জনগণের জন্য একটি বড় স্বস্তি নিয়ে আসে এবং ইউরোপে নাৎসি জার্মানির পতনের সূচনা করে। এই মুক্তি ফরাসি প্রতিরোধ আন্দোলনের একটি বিজয় হিসেবে পালিত হয়।

১৯৪৯ – উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো) গঠিত হয়

১৯৪৯ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো) গঠিত হয়। এই সামরিক জোটটি মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের বিস্তার রোধ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ন্যাটো আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সামরিক জোট হিসেবে বিদ্যমান এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৬৬ – ভারতীয় সাঁতারু মিহির সেন জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রম করেন

১৯৬৬ সালে, ভারতীয় সাঁতারু মিহির সেন জিব্রাল্টার প্রণালী সাঁতার কেটে অতিক্রম করেন। এটি তার অসাধারণ শারীরিক ক্ষমতা এবং ধৈর্যের পরিচয় দেয়। মিহির সেনের এই সাফল্য তাকে আন্তর্জাতিক সাঁতারে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যায় এবং ভারতীয় খেলাধুলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে ওঠে।

১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় পানামা ও উরুগুয়ে

১৯৭২ সালে, পানামা এবং উরুগুয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য ছিল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গঠনে সহায়ক হয়েছিল। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৯৭৪ – ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ ভারতের পঞ্চম রাষ্ট্রপতি হন

১৯৭৪ সালের এই দিনে, ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ ভারতের পঞ্চম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ভারতের দ্বিতীয় মুসলিম রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং তার শাসনামলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার রাষ্ট্রপতিত্বের সময়ে ভারতীয় গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা এবং সংহতি বজায় ছিল।

১৯৮৮ – সাংবাদিক, সাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীন মৃত্যুবরণ করেন

১৯৮৮ সালে, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীন মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য এবং সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার মৃত্যু বাংলা সাহিত্যে একটি শূন্যতার সৃষ্টি করে, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক চিরস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।

১৯৮৯ – ৪৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের পর পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হলেন তাদেউজ মাজোউইকি

৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের পর তাদেউজ মাজোউইকি পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। এই ঘটনাটি পোল্যান্ড এবং পূর্ব ইউরোপের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হয়। তাদেউজ মাজোউইকি ছিলেন পোল্যান্ডের প্রথম অ-কাম্যুনিস্ট প্রধানমন্ত্রী, যিনি “সলিডারিটি” আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন। তার নেতৃত্বে পোল্যান্ড একটি গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হয়, যা পরবর্তীতে অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্যও উদাহরণ স্থাপন করে।

১৯৯১ – তুর্কমেনিয়ার সার্বভৌমত্ব ঘোষণা

১৯৮৯ সালে, পোল্যান্ডে ১৯৯১ সালের এই দিনে তুর্কমেনিয়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে। তুর্কমেনিস্তানের এই স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত। দেশটি স্বাধীনতা লাভের পর থেকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে গঠনমূলক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করে। এটি মধ্য এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পায়।

১৯৯১ – পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে

১৯৯১ সালের ২৪ আগস্ট, ইউক্রেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইউক্রেনের এই স্বাধীনতা ঘোষণাটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পূর্ব ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রের একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। এটি ইউক্রেনের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যেখানে দেশটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তার নিজস্ব পথ নির্মাণের সুযোগ পায়। ইউক্রেনের স্বাধীনতা অর্জন দেশটির জনগণের জন্য গর্বের একটি বিষয় ছিল এবং এটি ইউরোপের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হয়ে ওঠে।

এই ঘটনাগুলো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এবং বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে, যা প্রতিটি দেশের ইতিহাস এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*