
বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে ডিজিটাল উন্নয়নের পথে, আর ২০২৫ সালে মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। ৫জি ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (MFS) নতুন মাত্রা—সব মিলিয়ে প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রা মানুষের জীবনকে আরও সহজ ও সংযুক্ত করে তুলবে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের মোবাইল প্রযুক্তির কোন ট্রেন্ডগুলো দাপট দেখাবে।
১. 5G ইন্টারনেট হবে বাস্তবতা
২০২৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার পর, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের প্রধান শহরগুলো—ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে 5G পুরোপুরি চালু হতে পারে। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের মতো বড় টেলিকম কোম্পানিগুলো এ নিয়ে কাজ করছে, যা ৪জি-এর তুলনায় ১০০ গুণ দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেবে।

এর ফলে টেলিমেডিসিন, অনলাইন শিক্ষা ও স্মার্ট সিটির মতো সেক্টরে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। তবে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে 5G প্রবেশে কিছুটা সময় লাগতে পারে। সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে কাজ করছে।
২. সস্তায় স্মার্টফোন, সবার হাতে ইন্টারনেট
স্থানীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন ও সিম্ফনি, আর আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড শাওমি ও রিয়েলমি—সবাই ১০,০০০ টাকার নিচে ৫জি-সমর্থিত স্মার্টফোন বাজারে আনছে। সরকার স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে কর ছাড় দিচ্ছে, যার ফলে স্মার্টফোনের দাম কমে যাচ্ছে।

এর ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০% ছাড়িয়ে যেতে পারে। নতুন এসব ফোনে থাকবে লম্বা ব্যাটারি ব্যাকআপ ও বাংলাভাষী অ্যাপ, যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য উপযোগী হবে।
৩. মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নতুন যুগ: MFS 2.0
বিকাশ, নগদ ও রকেট শুধু টাকা পাঠানোর প্ল্যাটফর্মেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। ২০২৫ সালের মধ্যে এসব অ্যাপে মাইক্রোলোন, বীমা ও আন্তর্জাতিক লেনদেনের সুবিধা যুক্ত হবে।

এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ভয়েস-কমান্ড ফিচার চালু হবে, যা বাংলায় ভয়েস ইনপুট গ্রহণ করতে পারবে। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকরাও সহজে ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
৪. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও লোকাল অ্যাপের বিস্তার
২০২৫ সালে বাংলা ভাষায় কাজ করা AI অ্যাসিস্ট্যান্টের জনপ্রিয়তা বাড়বে। ভয়েস-নির্ভর নেভিগেশন, কৃষকদের জন্য আবহাওয়ার তথ্য ও শিক্ষার্থীদের জন্য কাস্টমাইজড পড়াশোনার সুবিধা এসব অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
দেশীয় স্টার্টআপ যেমন Sheba.xyz ও Pathao তাদের সেবা আরও উন্নত করতে AI ব্যবহার করছে। অনলাইন গ্রোসারি প্ল্যাটফর্ম Chaldal কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চাহিদা অনুমান করে দ্রুত ডেলিভারি নিশ্চিত করবে।
৫. মোবাইল-ভিত্তিক ই-কমার্সের উত্থান
Daraz, AjkerDeal-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো মোবাইল অ্যাপে আরও ফোকাস দিচ্ছে। ভার্চুয়াল ট্রাই-অন (AR), ফেসবুক লাইভ শপিং ও WhatsApp ক্যাটালগের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির প্রবণতা বাড়বে।
ক্যাশ-অন-ডেলিভারি এখনো জনপ্রিয় থাকলেও, QR কোড পেমেন্ট বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হবে।
৬. স্মার্ট কৃষি ও IoT প্রযুক্তির প্রসার
কৃষকরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে IoT সেন্সর ব্যবহার করে মাটির স্বাস্থ্য ও আবহাওয়ার তথ্য জানতে পারবে। iFarmer-এর মতো স্টার্টআপ কৃষকদের বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে অ্যাপ-ভিত্তিক সমাধান আনছে।
শহরাঞ্চলে স্মার্ট হোম ডিভাইসের ব্যবহার বাড়বে, যা স্মার্টফোন অ্যাপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। মধ্যবিত্তের মধ্যে চীনা প্রযুক্তির স্মার্ট ডিভাইসের চাহিদা বাড়বে।
সমস্যাগুলো কী?
সবকিছুই ইতিবাচক নয়। ৫জি’র অবকাঠামো এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়, বিশেষ করে শহরের বাইরে। বিদ্যুৎ সমস্যা ও ডিজিটাল শিক্ষার অভাবও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এছাড়া, সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকিও রয়েছে। তবে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করবে।
শেষ কথা: বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত
২০২৫ সাল হবে মোবাইল প্রযুক্তির জন্য একটি যুগান্তকারী বছর। কৃষক থেকে শিক্ষার্থী—সবার জীবন মোবাইল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাবে। প্রযুক্তি ও সহজলভ্যতার সমন্বয়ে বাংলাদেশ এক নতুন সংযুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আপনি প্রস্তুত তো? প্রযুক্তির এই বিপ্লবের সাক্ষী হতে আমাদের সাথেই থাকুন!
Leave a Reply