আমি তখন খবরটা শুনছিলাম সন্ধ্যার দিকে, চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি আর টিভির স্ক্রলে হঠাৎ দেখি—“দেশে ফিরে যা বললেন খালেদা জিয়া, মন্ত্রীদের মাথায় হাত!” প্রথমে তো ভাবলাম, এই হয়তো কোন গুজব। কিন্তু না, খবরে চোখ আটকে গেল। তারপর বিস্তারিত জানলাম, আর যেটা জানলাম—তা শুধু আমি না, পুরো দেশের মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি: আমি শুনে ঠিক কী বুঝলাম?
আমি রাজনীতির পাঁড় ভক্ত না, তবে দেশের বড় বড় নেতাদের বক্তব্য বরাবরই আমাকে টানে। খালেদা জিয়া অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন, প্রায় নিঃশব্দে ছিলেন দেশের রাজনীতিতে। কিন্তু এবার দেশে ফিরেই তিনি যেভাবে সরব হলেন, তাতে রাজনীতির মাঠ যেন আচমকাই কাঁপে উঠলো।
তিনি যেটা বললেন—তা শুধু একটি বক্তব্য না, একধরনের হুঁশিয়ারি, একরাশ ক্ষোভ আর নিজের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে সাজানো বাস্তবতা। তাঁর কণ্ঠে ছিল হতাশা, অভিযোগ আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনার একটা ছাপ। আমি তার বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ শুনে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারলাম, তা হলো—তিনি আর চুপ থাকতে চান না।
বক্তব্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক যেগুলো সবাইকে চমকে দিয়েছে:
-
সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরাসরি আঙুল তোলা:
তিনি স্পষ্ট বললেন—দেশ এখন ‘একদলীয়’ পথে হাঁটছে। ভোটাধিকার বলে কিছু নেই। মানুষের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। এভাবে নাকি দেশ চলতে পারে না। -
আন্দোলনের ঘোষণা:
তাঁর কথায় উঠে এসেছে, সময় এসেছে আবার রাস্তায় নামার। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। বলেই ফেললেন—“আমার জীবনের শেষ দিক, এই দেশকে রক্ষা করেই যেতে চাই।” -
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ:
দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, রিজার্ভ সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি—সবকিছু নিয়ে বিস্তারিত অভিযোগ তুলেছেন।
এখানে যদি একটু থামেন, তাহলে ভাবতে পারেন: সত্যিই কি এত কিছু হচ্ছে? নাকি এটি একটি রাজনৈতিক নাটক?
আমি নিজেও প্রথমে সেটাই ভাবছিলাম। কিন্তু যখন বাস্তব জীবন আর বাজারের অবস্থা দেখি, তখন অনেক কথাই সত্য মনে হয়। চালের দাম, তেলের দাম, ডলারের রেট—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট চোখে পড়ে।
যা বললেন খালেদা জিয়া, তা মন্ত্রীদের মাথায় হাত পড়ার মতোই! কেন?
কারণ, তাঁর কথায় যে সাহস, তথ্য এবং আত্মবিশ্বাস ছিল, তা অনেক সময় সরকারের পক্ষ থেকেও হয়তো বলা সম্ভব হয় না। তিনি নাম ধরে ধরে মন্ত্রীদের সমালোচনা করেছেন। অনেক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। বলছেন—যাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকা উচিত, তারা আজ ক্ষমতায়।
তাঁর এ বক্তব্যে মন্ত্রীরা প্রথমে প্রতিক্রিয়া না দিলেও পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একে একে প্রতিউত্তর দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এই বক্তব্যে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
এখানেই বাস্তবতা—রাজনীতিতে এমন বক্তব্যের পেছনে বরাবরই কিছু খারাপ দিকও থাকে।
-
দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
-
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তা অনুভব করতে পারেন।
-
রাজনীতিতে বিভক্তি আরও বাড়তে পারে।
তবে সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো—জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। কারণ, একদিকে সরকার বলছে সব ঠিক আছে, অন্যদিকে বিরোধীদল বলছে সব শেষ।
তাহলে সমাধান কী? কী করলে ভালো হয়?
আমার ব্যক্তিগত মত, খালেদা জিয়া হোক বা অন্য কেউ—সত্য বলাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই সত্য যদি বিভ্রান্তি তৈরি করে, তাহলে তা আর কল্যাণকর হয় না। তাই যা বলার, তা যুক্তিসম্মত প্রমাণসহ বলা উচিত। আর সমাধান হতে পারে:
-
একটি খোলামেলা জাতীয় সংলাপ।
যেখানে সব পক্ষ মুখোমুখি বসে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলবে। -
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
যেন সাধারণ মানুষ সত্যটা জানতে পারে। -
জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো।
ভোটের মাধ্যমে হোক, মতামতের মাধ্যমে হোক—মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে।
শেষ কথা: আমার অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণ আর কিছু নির্ভরযোগ্য তথ্য
আমি গত কয়েক বছর ধরে দেশের রাজনীতির ওপর গভীরভাবে নজর রাখছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ভুয়া খবর থাকে, তাই আমি কথা বলি বাস্তব ডেটা ও নির্ভরযোগ্য সোর্স অনুযায়ী।
-
Transparency International-এর রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে দুর্নীতির হার আগের তুলনায় বেড়েছে।
-
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট দেখলে বোঝা যায়—রিজার্ভ কমছে, আমদানি ব্যয় বাড়ছে।
-
UNDP-র সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে—সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এই তথ্যগুলো খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পেছনের সত্যকে অনেকাংশে ব্যাখ্যা করে।
আপনার কাছে প্রশ্ন: আপনি কী ভাবেন?
খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য কি রাজনৈতিক চমক? নাকি একজন অভিজ্ঞ নেত্রীর দেশ নিয়ে চিন্তার বহিঃপ্রকাশ?
পাঠক হিসেবে আপনার মতামতও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপনি-আমি মিলে এই দেশের ভবিষ্যৎ গড়ি। কেউ রাজনীতির বাইরে থাকতে পারে, কিন্তু রাজনীতির প্রভাব থেকে কেউই মুক্ত না।